তাগুত (সীমালঙ্ঘন কারী)

 

 

images

الطَّاغُوت (ত্বাগুতসমূহ) ”তাগুত” মানে সীমালঙ্ঘনকারী। তাগুত শব্দ এসেছে তাগা যার অর্থ “সীমা লংঘন করা”, আল্লাহ ছাড়া যা কিছুর উপাসনা করা হয় এবং যে এতে রাজি-খুশি থাকে, তাকে তাগুত বলা হয়।

ইমাম ইবনে জারীর তাবারী বলেন- “ঐ সকল আল্লাহদ্রোহী যারা আল্লাহর নাফরমানীতে সীমালঙ্ঘন করেছে এবং মানুষ যাদের আল্লাহর পরিবর্তে সেচ্ছায় অথবা জোরপূবক আনুগত্য করে সে-ই তাগুত। চাই সে মানুষ, জ্বীন, শয়তান, প্রতীমা বা অন্য কিছূ যাই হোক। (তাফসীরে তাবারী:২/২১)

 

ইমাম ইবনুল কাইয়ুম বলেন- ”তাগুত হচ্ছে ঐ সকল মা’বুদ, লিডার, পীর-বুযুর্গ যাদের আনুগত্য করতে গিয়ে সীমালঙ্ঘন করা হয় ।এবং আল্লাহ ও তার রসূলকে বাদ দিয়ে যাদের কাছে বিচার ফায়সালা চাওয়া হয় অথবা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদত করা হয়।” (এ’লামুল মুওয়াক্কেঈ’ন: ১/৫০)

 

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন যে,

 

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَن يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا

 

আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা দাবী করে যে, যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। আমরা সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছি এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে। তারা বিরোধীয় বিষয়কে তাগুতের (শয়তানের) দিকে নিয়ে যেতে চায়, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে, যাতে তারা তাগুতকে (শয়তানকে) মান্য না করে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করে পথভ্রষ্টতায় ফেলতে চায়।” (সূরা নিসা: ৪:৬০)

 

 

তাগুত (সীমালঙ্ঘনকারী) কত প্রকার?

 

[ তাগুত অনেক প্রকারের আছে তার থেকে প্রধান ৫ প্রকার উল্লেখ করা হলোঃ

 

১.ইবলিশঃ সে আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদতের দিকে আহবান করে।

أَلَمْ أَعْهَدْ إِلَيْكُمْ يَا بَنِي آدَمَ أَن لَّا تَعْبُدُوا الشَّيْطَانَ ۖ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ [٣٦:٦٠]وَأَنِ اعْبُدُونِي ۚ هَٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيمٌ

হে বনী-আদম! আমি কি তোমাদেরকে বলে রাখিনি যে, শয়তানের বাদত করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? এবং আমার বাদত করএটাই সরল পথ(সুরা ইয়াসিনঃ ৩৬:৬০-৬১)

সুতরাং আল্লাহ ছাড়া যা কিছুর উপাসনা করা হয় এর মূলে রয়েছে ইবলিশ। সেই হচ্ছে সমস্ত শিরকের হোতা।

 

২.আল্লাহর আইন বিরোধী অত্যাচারী শাসকঃ যে আল্লাহর বিধান পরিবর্তন করে দেয় এবং মানুষের বানানো শাসনতন্ত্র কায়িম করে। যেমন কেউ যদি বলে,

চোরের শাস্তি হাত কাটা বর্বরতা, হত্যার শাস্তি (কেসাস), জিনার শাস্তি (রজম) বর্তমান যুগে চলবেনা আল্লাহ কি বলেছেন দেখুনঃ

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِصَاصُ فِي الْقَتْلَى ۖ الْحُرُّ بِالْحُرِّ وَالْعَبْدُ بِالْعَبْدِ وَالْأُنثَىٰ بِالْأُنثَىٰ ۚ فَمَنْ عُفِيَ لَهُ مِنْ أَخِيهِ شَيْءٌ فَاتِّبَاعٌ بِالْمَعْرُوفِ وَأَدَاءٌ إِلَيْهِ بِإِحْسَانٍ ۗ ذَٰلِكَ تَخْفِيفٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَرَحْمَةٌ ۗ فَمَنِ اعْتَدَىٰ بَعْدَ ذَٰلِكَ فَلَهُ عَذَابٌ أَلِيمٌ [٢:١٧٨]وَلَكُمْ فِي الْقِصَاصِ حَيَاةٌ يَا أُولِي الْأَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

হে ঈমানদারগন! তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে কেসাস গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায়, দাস দাসের বদলায় এবং নারী নারীর বদলায়অতঃপর তার ভাইয়ের তরফ থেকে যদি কাউকে কিছুটা মাফ করে দেয়া হয়, তবে প্রচলিত নিয়মের অনুসরণ করবে এবং ভালভাবে তাকে তা প্রদান করতে হবেএটা তোমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে সহজ এবং বিশেষ অনুগ্রহএরপরও যে ব্যাক্তি বাড়াবাড়ি করে,তার জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আযাবহে বুদ্ধিমানগণ! কেসাসের মধ্যে তোমাদের জন্যে জীবন রয়েছে, যাতে তোমরা সাবধান হতে পার (সুরা বাকারাহঃ ২:১৭৮-১৭)

 

কুরআনে আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন,

 

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَن يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا [٤:٦٠وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا إِلَىٰ مَا أَنزَلَ اللَّهُ وَإِلَى الرَّسُولِ رَأَيْتَ الْمُنَافِقِينَ يَصُدُّونَ عَنكَ صُدُودًا

আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা দাবী করে যেঃ যা আপনার প্রতি অবর্তীর্ণ করা হয়েছে আমরা সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছি এবং আপনার পূর্বে যা অবর্তীণ হয়েছেতারা বিরোধীয় বিষয়কে তাগুতের দিকে নিয়ে যেতে চায়, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে, যাতে তারা তাগুতকে অস্বীকার করেপক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়আর যখন আপনি তাদেরকে বলবেন, আল্লাহর নির্দেশের দিকে এসো-যা তিনি রসূলের প্রতি নাযিল করেছেন, তখন আপনি মুনাফেকদিগকে দেখবেন, ওরা আপনার কাছ থেকে সম্পূর্ণ ভাবে সরে যাচ্ছে” (সুরা আন-নিসাঃ ৪:৬০-৬১)

 

 

কুরআনে আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন,

 

فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا

 

অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম! সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে (নবী সা. কে) ন্যায়বিচারক বলে মনে না করেঅতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা হূষ্টচিত্তে তা কবুল করে নেবে।” (সুরা আন-নিসাঃ ৪:৬৫)।

 

৩. আল্লাহ যা অবতীর্ন করেছেন (কুরআন+সুন্নাহ) তা বাদ দিয়ে যে বিচারক/শাসক বা নেতাগন অন্য আইন/বিধান/সংবিধান দিয়ে ফয়সালা করে যেমন কুরআন-হাদীস বিরোধী কোনো আইন রায়, কিয়াস, কারো ফতোয়া, অলিদের কথা, পীর মাশায়েখর কথা মানা, সংসদে আইন পাশ করে সমাজে চাপিয়ে দেয়া এবং বিজাতিদের মন গড়া সংবিধান মানা। যেমন আল্লাহ বলেছেনঃ

وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ

যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুযায়ী ফয়সালা করে না তারাই কাফের ”(সুরা আল-মায়িদাহঃ ৫:৪৪)

 

৪. যে ইলমে গায়েববা অদৃশ্য জ্ঞানের দাবী করে সে তাগুত এদের মাঝে রয়েছে জ্যোতিষী, গণক, রাশি-চক্র ইত্যাদি। যেমন আল্লাহ বলেনঃ

 

وَعِندَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَا إِلَّا هُوَ ۚ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ ۚ وَمَا تَسْقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلَّا يَعْلَمُهَا وَلَا حَبَّةٍ فِي ظُلُمَاتِ الْأَرْضِ وَلَا رَطْبٍ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ

তাঁর কাছেই অদৃশ্য জগতের চাবি রয়েছেএ গুলো তিনি ব্যতীত কেউ জানেনা স্থলে ও জলে যা আছে, একমাত্র তিনিই জানেনকোন পাতা ঝরে না, কিন্তু তিনি তা জানেনকোন শস্য কণা মৃত্তিকার অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন আর্দ্র ও শুস্ক দ্রব্য পতিত হয় না, কিন্তু তা সব প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে (সুরা আনআ’মঃ ৬:৫৯)

 

. আল্লাহ ছড়া যার ইবাদত/পূজা/উপাসনা করা হয়, এবং এতে যে রাজী-খুশি থাকে সে তাগুতএদের মাঝে রয়েছে সেইন্ট, ঠাকুর, পীর-ফকির, ধর্মীয় গুরু, নেতা ইত্যাদি যাদেরকে পূজা করা হয়।

 

যেমন আল্লাহ বলেনঃ

 

وَمَن يَقُلْ مِنْهُمْ إِنِّي إِلَٰهٌ مِّن دُونِهِ فَذَٰلِكَ نَجْزِيهِ جَهَنَّمَ ۚ كَذَٰلِكَ نَجْزِي الظَّالِمِينَ

তাদের মধ্যে যে বলে যে, তিনি (আল্লাহ) ব্যতীত আমিই উপাস্য, তাকে আমি জাহান্নামের শাস্তি দেব আমি জালেমদেরকে এভাবেই প্রতিফল দিয়ে থাকি ”(সুরা আল-আম্বিয়াঃ ২১:২৯)  ]

[ মূলঃ শায়খুল ইসলাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহহাব (রাহিমাহুল্লাহ) ]

 

 

তাগুতের (সীমালঙ্ঘনকারীর) অস্বীকার করা ওয়াজিব:

 

[ মহান আল্লাহ আদম সন্তানের উপর প্রথম যা ফরয করেছেন, তা হল তাগুতকে অস্বীকার করা এবং আল্লাহকে স্বীকার করা (আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখা)। এই কথার দলীল হচ্ছে কুরআনের এই আয়াতঃ

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ

আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুত থেকে দূরে থাক ” (সুরা আন-নাহলঃ ১৬:৩৬)

তাগুতকে অস্বীকার করবে কিভাবে?

১। এই বিশ্বাস রাখবে যে, গাইরুল্লাহর ইবাদত বাতিল। গাইরুল্লাহর ইবাদত ও দাসত্ব বজর্ন ও অপছন্দ করবে।

২। গাইরুল্লাহর ইবাদত ও দাসত্বকারীকে কাফির জানবে এবং তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষন করবে। ]

[ মূল:সরল তাওহীদ পৃষ্ঠা-৩০, আব্দুল হামীদ মাদানি ফাইযি ]

Leave a comment