আল্লাহ্, তাঁর রসূল ও ইসলাম নিয়ে কটাক্ষকারীর বিধান

লেখক Abdus Salam Bin Yakublkljjfd

রসূলুল্লাহ (সাঃ) কে ‘সকল মানুষ থেকে

বেশী ভালোবাসা ঈমানের শর্ত

আনাস (রা.) হতে বর্ণিত,

“নাবী (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের কেউ মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি তার নিকট তার সন্তান-সন্তুতি, পিতামাতা এবং সকল মানুষ হতে অধিক প্রিয় হই।
[ বুখারী, অধ্যায়ঃ ২, কিতাবুল ঈমান, অনুচ্ছেদঃ ৮, রসূলুল্লাহ (সাঃ) কে ভালবাসা ঈমানের অন্তর্ভূক্ত, হাদিস # আরবী মিশর ১৪,১৫, তা. পা. ১৪,১৫, ই.ফা.বা. ১৩,১৪, আ.প্র. ১৩,১৪, মুসলিম, অধ্যায় ১, কিতাবুল ঈমান, অনুচ্ছেদঃ ১৬,]

রসূলুল্লাহ (সাঃ) কে স্ত্রী,পুত্র,পরিজন ও পিতামাতা তথা সকলের চাইতে অধিক ভালবাসা ওয়াজিব এবং যে ব্যক্তি এরূপ ভালবাসবে না তার ঈমান নেই বলা হয়েছে, হাদিস

[আ.হা.লা. ৭৩, ই.ফা. ৭৫, ই.সে. ৭৭, নাসাঈ, সহীহ্, অধ্যায়ঃ ৪৭, কিতাবুল ঈমান এবং এর বিধানসমূহ, অনুচ্ছেদঃ ১৯, ঈমানের আলামত, হাদিস # আরবী মিশর, ৫০১৩, ৫০১৫ ই.ফা. ৫০১২,৫০১৪, (হাদিসটি নাসাঈর বর্ণনা) ]।

রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কে ধন-সম্পদ থেকেও

বেশী ভালোবাসা ঈমানের শর্ত

আনাস (রা.) হতে বর্ণিত,

রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, কোনো বান্দা ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি তার নিকট তার পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ ও অন্যান্য লোকদের চাইতেও অধিক প্রিয় হব।
[-মুসলিম, অধ্যায়ঃ ১, কিতাবুল ঈমান, অনুচ্ছেদঃ ১৬, রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কে স্ত্রী, পুত্র, পরিজন ও পিতা-মাতা তথা সকলের চাইতে অধিক ভালবাসা ওয়াজিব এবং যে ব্যক্তি এরূপ ভালবাসবে না তার ঈমান নেই বলা হয়েছে, হাদিস # আ.হা.লা. ৭২, ই.ফা. ৭৪, ই.সে. ৭৬]।

রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কে নিজের জীবন থেকে
বেশী ভালোবাসা ঈমানের শর্ত

আব্দুল্লাহ্ ইবনে হিশাম (রা.) হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন আমরা একবার নাবী (সাঃ) এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি তখন ওমার ইবনে খাত্তাব (রা.) এর হাত ধরেছিলেন। ওমার (রা.) তাঁকে (সাঃ) কে বললেন, হে আল্লাহর রসূল (সাঃ) আমার জীবন ছাড়া আপনি আমার কাছে সবকিছু থেকে অধিক প্রিয়। তখন নাবী (সাঃ) বললেন না, যাঁর হাতে আমার প্রাণ ঐ স্বত্ত্বার ক্বসম তোমার কাছে আমি যেন তোমার প্রাণের চেয়েও অধিক প্রিয় হই। তখন ওমার (রা.) তাঁকে (সাঃ) কে বললেন, আল্লাহ্’র ক্বসম এখন আপনি আমার কাছে আমার প্রাণের চেয়েও অধিক প্রিয়। নাবী (সাঃ) বললেন, হে ওমার (এখন তুমি ঈমানদার হলে)।
[বুখারী, অধ্যায়ঃ ৮৩, শপথ ও মানত, অনুচ্ছেদঃ ৩, নাবী (সাঃ) এর শপথ কেমন ছিল, হাদিস # আরবী মিশর, ৬৬৩২, তা.পা. ৬৬৩২, ই.ফা. ৬১৭৮, আ.প্র. ৬১৭০]।

ঈমানদারগণ রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কে ভালোবাসে

আর মুনাফিক্বরা শত্রুতা পোষণ করে
আলী (রা.) বলেছেন,
রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) আমার নিকট অঙ্গীকার করেছেন, কেবল মুমিনগণই আমাকে ভালবাসবে আর মুনাফিক্বরাই আমার প্রতি শত্রুতা পোষণ করবে। [
[নাসাঈ, সহীহ্, অধ্যায়ঃ ৪৭, কিতাবুল ঈমান এবং এর বিধান সমূহ, অনুচ্ছেদঃ ১৯, ঈমানের চিহ্ন, হাদিস # আরবী মিশর ৫০১৮, ই.ফা.বা. ৫০১৭, অনুচ্ছেদঃ ২০, মুনাফিক্বের চিহ্ন, হাদিস # আরবী মিশর ৫০২২, ই.ফা.বা. ৫০২১] |

ঈমানের স্বাদ যখন পাওয়া যায়

আনাস (রা.) হতে বর্ণিত,
নাবী (সাঃ) বলেছেন, তিনটি গুণ যার মধ্যে আছে সে ঈমাণের স্বাদ পেয়েছে, (১) আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল (সাঃ) তার নিকট অন্য সকল কিছু হতে অধিক প্রিয় হওয়া,

(২) কাউকে একমাত্র আল্লাহ্’র জন্যই ভালবাসা,

(৩) কুফুরীতে ফিরে যাওয়াকে আগুণে ঝাঁপ দেয়ার মত অপছন্দ করা।
[বুখারী, অধ্যায়ঃ ২, কিতাবুল ঈমান, অনুচ্ছেদঃ ৯, ঈমানের স্বাদ, আরবী মিশর ১৬, তা.পা. ১৬, ই.ফা.বা. ১৫, আ.প্র. ১৫, অনুচ্ছেদঃ ১৪, কুফুরীতে ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার ন্যায় অপছন্দ করা ঈমানের অন্তর্ভূক্ত, আরবী মিশর ২১, তা.পা. ২১, ই.ফা.বা. ২০, আ.প্র. ২০, অধ্যায়ঃ ৭৮, আচার ব্যবহার, অনুচ্ছেদঃ ৪২, আল্লাহ তা’লার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ভালবাসা, হাদিস # আরবী মিশর ৬০৪১, তা.পা. ৬০৪১, ই.ফা. ৫৫০২, আ.প্র. ৫৬০৬, অধ্যায়ঃ ৮৯, বল প্রয়োগের মাধ্যমে বাধ্য করা, অনুচ্ছেদঃ ২, যে ব্যক্তি কুফরী গ্রহণ করার বদলে দৈহিক নির্যাতন, নিহত ও লাঞ্চিত হওয়কে বেছে নেয়, হাদিস # আরবী মিশর ৬৯৪১, তা.পা. ৬৯৪১, ই.ফা. ৬৪৭২, আ.প্র., ৬৪৫৯ মুসলিম, অধ্যায়ঃ ১, কিতাবুল ঈমান, অনুচ্ছেদঃ ১৫, যে এসব গুণে গুণান্বিত হবে সেই ঈমানের স্বাদ পাবে, হাদিস # আ.হা.লা. ৬৯-৭০, ই.ফা.বা. ৭১-৭২, ই.সে. ৭৩-৭৪, নাসাঈ, সহীহ, অধ্যায়ঃ ৪৭, কিতাবুল ঈমান এবং এর বিধান সমূহ, অনুচ্ছেদঃ ২, ঈমানের স্বাদ, হাদিস # আরবী মিশর ৪৯৮৭, ই.ফা.বা. ৪৯৮৬, অনুচ্ছেদঃ ৩, ঈমানের মিষ্টতা, হাদিস # আরবী মিশর ৪৯৮৮, ই.ফা.বা. ৪৯৮৭, অনুচ্ছেদঃ ৪, ইসলামের স্বাদ, হাদিস # আরবী মিশর ৪৯৮৯, ই.ফা.বা. ৮৯৮৮, ইবনে মাজাহ্, সহীহ্, অধ্যায়ঃ ৩৬, কিতাবুল ফিতনাহ্, অনুচ্ছেদঃ ২৩, বিপদের সময় ধৈর্য্যধারণ, হাদিস # আরবী মিশর ৪০৩৩ (হাদিসটি বুখারীর বর্ণনা)]

রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কে কটাক্ষকারী কাফির
মহান আল্লাহ্ বলেন,
তাদের জিজ্ঞেস করলে তারা জোর দিয়েই বলবে আমরা হাসি-ঠাট্টা ও খেল-তামাশা করছিলাম। বল, আল্লাহ্, তাঁর আয়াত ও তাঁর রসূলকে নিয়ে বিদ্রƒপ করছিলে ? ওজর দেখানোর চেষ্টা করোনা। ঈমান আনার পর তোমরা কাফির হয়ে গেছো…।”
[-সূরা তাওবাহ্, ৯/৬৫-৬৬]

এই আয়াত থেকে বুঝা যায়, যারা রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কে কটাক্ষ করবে তারা কাফির হয়ে যাবে।

রসূলুল্লাহ (সাঃ) কে কটাক্ষ করলে
তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড

====> জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত,

তিনি বলেন রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বললেন, কা’ব ইবনু আশরাফকে হত্যা করার দায়িত্ব কে নিতে পারবে। সেতো আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলকে কষ্ট দিয়েছে (অশ্লীল বাক্যের মাধ্যমে) মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ্ (রা.) তখন বললেন আমি পারবো। পরে তিনি তার কাছে (কা’ব বিন আশরাফের কাছে) গিয়ে বললেন, আমরা তোমার কাছে এক ওয়াসাক অথবা বলেছেন দু-ওয়াসাক খাদ্য ধার চাচ্ছি। সে বললো, তোমাদের মহিলাদেরকে আমার কাছে বন্ধক রাখ। তিনি বললেন, তুমি হলে আরবের সেরা সুন্দর ব্যক্তি তোমার কাছে মহিলাদেরকে কিভাবে বন্ধক রাখতে পারি? সে বললো তাহলে তোমাদের সন্তানদেরকে আমার কাছে বন্ধক রাখ। তিনি বললেন, কিভাবে সন্তানদেরকে তোমার কাছে বন্ধক রাখি, পরে এই বলে লোকজন তাদের নিন্দা করবে যে, দু/এক ওয়াসাকের জন্য তারা বন্ধক ছিল। এটা আমাদের জন্য হবে বিরাট কলঙ্ক। তার চেয়ে বরং তোমার কাছে আমাদের অস্ত্র বন্ধক রাখতে পারি। তারপর তিনি তাকে পরে আসার প্রতিশ্র“তি দিলেন এবং পরে এসে তাঁরা তাকে (কাব বিন আশরাফকে) হত্যা করলেন এবং নাবী (সাঃ) এর কাছে এসে সে সম্পর্কে তাঁকে (সাঃ) অবহিত করলেন।
[-বুখারী, অধ্যায়ঃ ৬৪, কিতাবুল মাগাযী, অনুচ্ছেদঃ ১৫, কা’ব ইবনু আশরাফের হত্যা, হাদিস # আরবী মিশর ৪০৩৭, তা.পা. ৪০৩৭, ই.ফা. ৩৭৩৯, আ.প্র. ৩৭৩৫, অধ্যায়ঃ ৪৮, বন্ধক, অনুচ্ছেদঃ ৩, অস্ত্র বন্ধক রাখা, হাদিস # আরবী মিশর ২৫১০, তা.পা. ২৫১০, ই.ফা. ২৩৪৫, আ.প্র. ২৩২৮, অধ্যায়ঃ ৫৬, জিহাদ ও যুদ্ধকালীন আচার ব্যবহার, অনুচ্ছেদঃ ১৫৮, যুদ্ধে মিথ্যা বলা, হাদিস # আরবী মিশর ৩০৩১, তা.পা. ৩০৩১, ই.ফা. ২৮১৬, আ.প্র. ২৮০৬, মুসলিম, অধ্যায়ঃ ৩৩, জিহাদ ও সফর, অনুচ্ছেদঃ ৪২, ইহুদি নেতা কা’ব ইবনু আশরাফের হত্যা, হাদিস # আ.হা.লা. ৪৫৫৬, ই.ফা. ৪৫১৩, ই.সে. ৪৫১৫ (হাদিসটি বুখারীর বর্ণনা)]।

====> বারাআ (রা.) হতে বর্ণিত,
“তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) আব্দুল্লাহ্ ইবনু আতিক্বকে আমীর (নেতা) বানিয়ে তার নেতৃত্বে আনসারদের কয়েকজন সাহাবীকে ইয়াহুদি আবু রাফিকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন, আবু রাফি রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কে কষ্ট দিত এবং এ ব্যপারে লোকদের সাহায্য করতো …।

[বুখারী, অধ্যায়ঃ ৬৪, কিতাবুল মাগাযী, অনুচ্ছেদঃ ১৬, আবু রাফি আব্দুল্লাহ্ ইবনু আবুল হুক্বায়ক্বের হত্যা, হাদিস # আরবি মিশর ৪০৩৯, তা.পা. ৪০৩৯, ই.ফা. ৩৭৪১, আ.প্র. ৩৭৩৭]।

====> (আব্দুল্লাহ্ বিন খাতলের) দু’জন গায়িকা দাসী ছিল। একজন ছিলো ফারতনা এবং অপরজন ছিলো তারই আরেক সঙ্গিনী। এরা দুজনেই রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কে নিয়ে কুৎসামূলক গান গেয়ে বেড়াত। তিনি (সাঃ) এই দু’জন দাসীকেও হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

[সিরাত ইবনে হীশাম, আরবী মিশর, অধ্যায়ঃ মান আমারন নাবিয়্যু (সাঃ) বিক্বতলিহীম, পৃষ্ঠাঃ ৬১৬, ই.ফা. ৪র্থ খণ্ড, প্রকাশকালঃ জানুয়ারী, ২০০৮ইং অধ্যায়ঃ রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) যাদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন, পৃষ্ঠাঃ ৬৫]।

====> আবু বারযা (রা.) হতে বর্ণিত,

তিনি বলেন একব্যক্তি আবু বাকার (রা.) কে মন্দ বললে আমি বললাম, আমি তাকে হত্যা করবো ? এতে তিনি আমাকে ধমক দিয়ে বললেন রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর পর এটা কারও জন্য বৈধ নয়।

[নাসাঈ, সহীহ্, অধ্যায়ঃ ৩৭, হত্যা অবৈধ হওয়া, অনুচ্ছেদঃ ১৬, রসূলুল্লাহ (সাঃ) কে মন্দ বলা, হাদিস# আরবী মিশর ৪০৭১, ই.ফা. ৪০৭২, অনুচ্ছেদঃ ১৭, এই হাদিস সম্পর্কে আ’মাশ থেকে বর্ণনাকারীদের মধ্যে শাব্দিক পার্থক্য, হাদিস # আরবী মিশর ৪০৭২, ৪০৭৩, ৪০৭৪, ৪০৭৫, ৪০৭৬, ৪০৭৭, ই.ফা. ৪০৭৩, ৪০৭৪, ৪০৭৫,৪০৭৬, ৪০৭৭, ৪০৭৮, আবু দাউদ, সহীহ্, অধ্যায়ঃ ৩৩, কিতাবুল হুদুদ, অনুচ্ছেদঃ ২, যে নাবী (সাঃ) কে গালী দেয় তার বিধান, হাদিস # আরবী রিয়াদ, ৪৩৬৩, হু.মা. ৪৩৬৩, ই.ফা. ৪৩১২ (হাদিসটি নাসাঈর বর্ণনা)]।

এই হাদিসগুলো থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কে কটাক্ষ করলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে।

রসূলুল্লাহ (সাঃ) কে কটাক্ষ করলে তাকে হত্যা করতে হবে আর এ বিষয়ে বিচারকের রায়ের অপেক্ষার প্রয়োজন নেই

ইবনে আবাস (রা.) বলেন,

রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সময় একজন অন্ধ লোক ছিল, তার একজন দাসী ছিল। যার গর্ভে তার দুই ছেলে জন্মেছিল। সেই দাসী সর্বদাই রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কথা উল্লেখ করে তাকে মন্দ বলত, অন্ধ ব্যক্তিটি তাকে এই জন্য ধমক দিত। কিন্তু সে তাতে কিছুই মনে করত না। তাকে নিষেধ করা হত তবুও সে বিরত হত না। অন্ধ লোকটি বললেন এক রাত্রে আমি রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কথা উল্লেখ করলে সে তাঁর (সাঃ) নিন্দা করতে শুরু করল। আমার তা সহ্য না হওয়ায়, আমি একটি হাতিয়ার নিয়ে তার পেটে ঢুকিয়ে দিলাম। তাতে সে মারা গেল। ভোরে লোকজন তাকে মৃত অবস্থায় দেখে ব্যাপারটি রসূলুল্লাহ (সাঃ) কে জানালেন। তিনি (সাঃ) সকল লোককে একত্র করে বললেন আমি আল্লাহর কসম দিয়ে ঐ ব্যক্তিকে বলছি, যে এমন কাজ করেছে সে হাজির হও। এ কথা শুনে ঐ অন্ধ ব্যক্তিটি ভয়ে উঠে এসে হাজির হলেন এবং বললেন হে আল্লাহর রসূল (সাঃ) আমি এই কাজ করেছি। সে আমার দাসী ছিল। আমার স্নেহময়ী সঙ্গীণী ছিল। তাঁর গর্ভের আমার দু’টি ছেলে রয়েছে, যারা দেখতে মুক্তার মত। কিন্তু সে প্রায় আপনাকে মন্দ বলত, গালী দিত। আমি নিষেধ করলেও সে থামত না, ধমক দিলেও সে থামত না। অবশেষে গত রাতে আমি আপনার কথা উল্লেখ করলে সে আপনাকে মন্দ বলতে আরম্ভ করল। তখন আমি একটি অস্ত্র উঠিয়ে তার পেটে ঢুকিয়ে দেই। তাতেই সে মারা যায়। রসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন তোমরা স্বাক্ষী থাক, ঐ দাসীর রক্তের কোন বিনিময় নেই।

[নাসাঈ, সহীহ্, অধ্যায়ঃ ৩৭, হত্যা অবৈধ হওয়া, অনুচ্ছেদঃ ১৬, রসূলুল্লাহ (সাঃ) কে মন্দ বলা, হাদিস # আরবী মিশর ৪০৭০, ই.ফা. ৪০৭১, আবু দাউদ, সহীহ্, অধ্যায়ঃ ৩৩, কিতাবুল হুদুদ, অনুচ্ছেদঃ ২, যে নাবী (সাঃ) কে গালী দেয় তার বিধান, হাদিস # আরবী রিয়াদ ৪৩৬১, ৪৩৬৩, হু.মা. ৪৩৬১, ৪৩৬৩, ই.ফা. ৪৩১০ (হাদিসটি নাসাঈর বর্ণনা)]।

এই হাদিসটি থেকে বুঝা যায়, ঐ অন্ধ সাহাবী তার দাসীকে রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কে কটাক্ষ করার কারণে নাবী (সাঃ) এর অনুমতি ছাড়াই হত্যা করেছিলেন। অথচ রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) মাদীনার বিচারক ছিলেন। এতে বুঝা যায়, রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কে কটাক্ষ করলে বিচারকের রায়ের অনুমতি ছাড়াই ঐ কটাক্ষকারীকে হত্যা করা যাবে।

কোনো মুসলিম রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কে কটাক্ষ করার পরে
তাওবাহ্ করলেও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে

রসূলুল্লাহ (দ) কে কটাক্ষ করলে তার শাস্তি যে মৃত্যুদণ্ড তা ইতিপূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু বুঝের বিষয় হচ্ছে যে, যে ব্যক্তি রসূলুল্লাহ্ (দ) কে কটাক্ষ করেছে সে যদি তাওবাহ্ করে তাহলে কি তাকে মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে ছাড় দেয়া যাবে ? না, তাকে ছাড় দেয়া যাবে না। তার তাওবাহ্টি তাকে জাহান্নাম থেকে হয়তো মুক্তি দিতে পারে কিন্তু পৃথিবীতে তার জন্য আল্লাহ্’র নির্ধারিত যে শাস্তি রয়েছে তা অবশ্যই কার্যকর করতে হবে। এ বিষয়টি বুঝতে নিম্নোক্ত হাদিসটি লক্ষ্য করুন।

ইমাম ইবনু হুসাইন (রা.) সূত্রে বর্ণিত,
একদা জুহাইনাহ্ গোত্রের জনৈক মহিলা নাবী (সাঃ) এর নিকট এসে বললেন সে ব্যভিচার করেছে এবং গর্ভবতী হয়েছে। রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তাঁর অভিভাবককে ডেকে এনে বললেন এঁর সঙ্গে উত্তম আচরণ কর। আর যখন সে সন্তান প্রসব করবে তখন তাঁকে আমার নিকট নিয়ে আসবে। অতপর, সে মহিলা সন্তান প্রসব করলে তার অভিভাবক তাঁকে নিয়ে এলো। নাবী (সাঃ) এর আদেশে তাঁকে কাপড় দিয়ে বেঁধে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করা হয়। অতপর, তিনি (সাঃ) সাহাবীদের আদেশ দিলেন যে, তাঁর জানাযার সলাত আদায় করতে। ওমার (রা.) বললেন, হে আল্লাহ্’র রসূল (সাঃ) আপনি তাঁর জানাযার সলাত আদায় করবেন ? সেতো ব্যভিচারিনী, তিনি (সাঃ) বললেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর ক্বসম সে মহিলা এমন তাওবাহ্ করেছে যে, যা মাদিনাবাসী সত্তর জনের মাঝে বন্টন করে দিলেও তাদের জন্য তা যথেষ্ট হবে। তুমি তাঁর চাইতে উত্তম কোন ব্যক্তিকে পাবে যে তার স্বত্ত্বাকে উৎসর্গ করে দিল ?

[-মুসলিম, অধ্যায়ঃ ৩০, কিতাবুল হুদূদ, অনুচ্ছেদঃ ৫, যে ব্যক্তি নিজে ব্যভিচার স্বীকার করে, হাদিস # আ.হা.লা. ৪৩২৩, ৪৩২৪, ]

এই হাদিসটি গভীরভাবে লক্ষ্য করুন। মহিলাটি এমনভাবে তাওবাহ্ করেছে, তার তাওবাহ্ যদি মাদিনাবাসী সত্তর জনের মাঝে বন্টন করে দেয়া হতো তাহলে তা তাদের জন্য যথেষ্ট হতো। কিন্তু তাঁর এই সুন্দর তাওবাহ্’র পরও রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তার ব্যভিচার করার শাস্তিটি এতটুকুও ছাড় দেননি। বরং তাঁকে পাথর মেরে হত্যা করিয়েছেন এবং তাঁর জন্য জানাযার সলাতও আদায় করতে আদেশ করেছেন। অর্থাৎ বুঝা গেল যে, অপরাধটির জন্য তাওবাহ্ করলে তা জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু পৃথিবীতে আল্লাহ্’র দেয়া নির্ধারিত এই শাস্তি থেকে মুক্তি দেয়া যাবে না। যদি পৃথিবীর শাস্তি থেকে মুক্তি দেয়া হতো তাহলে মানুষ অপরাধটি করতো আর তাওবাহ্ করে মাফ পেয়ে যেত। এতে করে পৃথিবীতে আরো বিশৃঙ্খলা হতো। এ বিষয়টি বুঝতে আরো একটি যুক্তি দিচ্ছি, প্রত্যেক দেশেই তাদের নিজস্ব আইন রয়েছে, এখন কেউ যদি কাউকে হত্যা করে তাহলে অবশ্যই ঐদেশের আইন অনুযায়ী তার মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে। কিন্তু হত্যাকারী লোকটি যদি বলে যে, আমি যা করেছি তা ভুল করেছি, অতএব আমাকে ক্ষমা করুন” তাকে কি ঐ দেশের আইন ক্ষমা করবে ? নিশ্চয়ই না।

ঠিক তেমনিভাবে রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কে কেউ যদি কটাক্ষ করে তাওবাহ্ করে তাহলে তার তাওবাহ্’র জন্য হয়তো জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে। কিন্তু পৃথিবীতে তার জন্য যে শাস্তি আল্লাহ্’র পক্ষ থেকে নির্ধারিত রয়েছে তা কার্যকর করতেই হবে। অর্থাৎ তাকে মৃত্যুদণ্ড দিতেই হবে।

কোনো অমুসলিম রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কে কটাক্ষ করার পরে

অনুতপ্ত হলে হবে না বরং ইসলাম গ্রহণ করলে
তার জন্য নির্ধারিত শাস্তি মওকুফ হবে

রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কে কটাক্ষ করলে তাকে অবশ্যই মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে। তবে যদি কটাক্ষকারী অমুসলিম হয় এবং সে কটাক্ষ করার পরে ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে তাকে আর মৃত্যুদণ্ড দেয়া যাবে না। রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কে কটাক্ষ করার কারণে আব্দুল্লাহ্ ইবনে খাতলের দুই গায়িকা দাসীকে নাবী (সাঃ) হত্যা করতে বলেছিলেন। তবে একজন ইসলাম গ্রহণ করলে রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তাকে ক্ষমা করেছিলেন। এ সম্পর্কে বর্ণনাটি লক্ষ করুন,

আব্দুল্লাহ্ ইবনে খাতলের দাসীদ্বয়ের একজনকে হত্যা করা হয় আর অপরজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পরবর্তীকালে ঐ দাসী ইসলাম গ্রহণ করলে রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তাকে নিরপাত্তাদান করেন। -সিরাত ইবনে হীশাম, আরবী মিশর, অধ্যায়ঃ পৃষ্ঠাঃ ৬১৭, ই.ফা. ৪র্থ খণ্ড, প্রকাশকালঃ জানুয়ারী, ২০০৮ইং অধ্যায়ঃ রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) যাদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন, পৃষ্ঠাঃ ৬৭

এই ঘটনা থেকেই বুঝা যায় যে, শুধুমাত্র ইসলাম গ্রহণ করলেই ঐ অমুসলিম কটাক্ষকারীকে মাফ করা যাবে। শুধুমাত্র অনুতপ্ত হলে হবে না। কারণ, আবু সুফিয়ান রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কে কটাক্ষ করত কিন্তু পরে যখন অনুতপ্ত হয়েছিল তখনও তাকে ছাড় দেয়ার কথা আসেনি। বরং তিনি যখন ইসলাম গ্রহণ করেছেন কেবল তখনি তাকে ক্ষমা করা হয়েছিল। এ সম্পর্কে বর্ণনাটি লক্ষ করুন,

রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বললেন, আবু সুফিয়ান এখনও কি তোমার বুঝে আসেনি যে, আমি আল্লাহ্’র পক্ষ থেকে সত্য রসূল ? জবাবে আবু সুফিয়ান বললেন, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক! আপনি কতইনা ধৈর্য্যশীল, মহানুভব ও আত্মীয়বৎশল! আল্লাহ্’র ক্বসম (আপনি নাবী হওয়ার ব্যাপারে) অব্যশই আমার মনে এখনো কিছু সন্দেহ রয়েছে। একথা শুনে আব্বাস (রা.) বলে উঠলেন, ধ্যাৎ! তুমি এখনি ইসলাম গ্রহণ করো তোমার গর্দান উড়িয়ে দেয়ার আগেই এবং স্বাক্ষ্য দাও যে, “নাই কোনো ইলাহ্ আল্লাহ্ ছাড়া এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহ্’র রসূল।” তখন আবু সুফিয়ান ইসলাম গ্রহণ করেন। -সিরাতে ইবনে হিশাম, আরবী মিশর, অধ্যায়ঃ পৃষ্টা # ৬১২, ই.ফা. প্রকাশকালঃ জানু, ২০০৮ইং, অধ্যায়ঃ রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কে আবু সুফিয়ান কর্তৃক আশ্রয়দান ও তাঁর ইসলাম গ্রহণ, পৃষ্ঠা # ৫৮।

এই ঘটনাটি লক্ষ করুন, আবু সুফিয়ান অনুতপ্ত হয়ে রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) প্রসংশা করছিলেন কিন্তু ইসলাম গ্রহণ করছিলেন না। তখন আব্বাস (রা.) বলেছিলেন তোমাকে হত্যা করার আগে ইসলাম গ্রহণ করো। এতে বুঝা গেল যে, রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কে কটাক্ষকারী শুধুমাত্র অনুতপ্ত হলে তাকে ক্ষমা করা হবে না। তাকে হত্যা করতেই হবে। তবে সে যদি ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে তাকে ক্ষমা করা হবে।

রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কে কটাক্ষ করার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড

এই আইনকে বিশ্বাস না করার বিধান

এই ব্যাপারটি ওয়াহীকে অস্বীকার করার নামান্তর। কারণ, রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) স্বয়ং নিজেই তাঁকে কটাক্ষ করার কারণে কা’ব বিন আশরাফকে হত্যা করিয়েছিলেন। সেখানে আমরা কোন দিক থেকে এই বিধানকে অস্বীকার করবো ? যারা রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর মাধ্যমে আসা বিধানকে বিশ্বাস করে না তাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ বলেন,

“আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূল এর বিরুদ্ধাচরণ করবে এবং তাঁর নির্ধারিত সীমালংঘন করবে, আল্লাহ্ তাকে জাহান্নামে দাখিল করবেন এবং সেখানে চিরকাল থাকবে আর সেখানে অবমাননাকর শাস্তি ভোগ করবে।“ -সূরা নিসা- ৪/১৪

এই আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, যারা রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর বিরুদ্ধাচরণ করবে তারা জাহান্নামে চিরকাল থাকবে। জাহান্নামে চিরকাল কোন মুসলিম থাকে না বরং কাফিররাই থাকে। এতে বুঝা যায়, রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর বিরুদ্ধাচরণকারীরা মুসলিম নয় তারা কাফির। তাই যারা রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর কটাক্ষ করার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বিশ্বাস করে না, তারা রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর বিরুদ্ধাচরণ করার কারণে কাফির হয়ে গেছে।

সরাসরি রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কে কটাক্ষ করেনি কিন্তু
কটাক্ষকারীদের সম্পর্কে বলে থাকে

তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে

এ সম্পর্কিত বিধান

এই বিষয়টি মূলত রসূলুল্লাহ (সাঃ) কে কটাক্ষ করার সাথে সমর্থন বুঝায়, যারা পরোক্ষভাবে রসূলুল্লাহ (সাঃ) কে কটাক্ষ করার ব্যাপারে সমর্থন করে তারাও মূলত রসূলুল্লাহ (সাঃ) কে কটাক্ষ করেছে বলে বুঝে নিতে হবে, কারণ মহান আল্লাহ বলেন,

…যে মন্দ কাজের জন্য সুপারিশ করবে, তার জন্য তাতে অংশ আছে…
(সূরা নিসা- ৪/৮৫)

এই আয়াত থেকে বুঝা যায়, যারা মন্দ কাজের সমর্থন করবে তারাও মূলতঃ ঐ মন্দ কাজের অংশীদার। তাই বুঝে নিতে হবে যে, যারা রসূলুল্লাহ (সাঃ) কে কটাক্ষ করার ব্যাপারে মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে বলে মন্তব্য করে, তারাও ঐ কটাক্ষ করার অপরাধের অংশীদার। এই কারণে এমন ব্যক্তিদেরকেও রসূলুল্লাহ (সাঃ) কে কটাক্ষ করার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে।

রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর কটাক্ষকারীকে যারা
হত্যা করতে বাঁধা প্রদান করে

এ সম্পর্কিত বিধান এ বিষয়টি দুইভাগে বিভক্ত-

(ক) যারা রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কে কটাক্ষ করেছে তাদের পক্ষ নিয়ে প্রতিরোধকারী-

এরা রসূলুল্লাহ (সাঃ) কে কটাক্ষ করার ব্যাপারে সমর্থন দিয়ে মূলতঃ ইসলামকেই কটুক্তি করেছে। এই শ্রেণির মানুষ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,

…আর যদি তারা তোমাদের দ্বীনের বিরুদ্ধে কটুক্তি করে তাহলে কাফির নেতাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর…।”-সূরা (তাওবা- ৯/১২)

(খ) যারা রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কে কটাক্ষ করেছে তাদের পক্ষ না নিয়ে বরং শান্তি বজায় রাখার দাবীতে প্রতিরোধকারী-

এরাই মূলতঃ অশান্তি সৃষ্টিকারী, কারণ যারা রসূলুল্লাহ (সাঃ) কে কটাক্ষ করেছে, তারা সমস্ত মুসলিমদের মনে এমনভাবে আঘাত দিয়েছে যে, মুসলিমদের জীবনের সমস্ত শান্তি নষ্ট করে দিয়েছে। মুসলিম সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য অবশ্যই ঐ কটাক্ষকারীদের হত্যা করতে হবে। যারা মুসলিম সমাজের এই শান্তি ফিরিয়ে আনার কাজকে প্রতিরোধ করে বলবে যে, “আমরা শান্তি বজায় রাখতে চাই”, তারা মূলত মুনাফিক্ব, তারা মুমিন নয়। এই সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত,

নাবী (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের (মুসলিমদের) বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করবে সে আমার উম্মত নয়। (মুসলিম, অধ্যায়ঃ ১, কিতাবুল ঈমাণ, অনুচ্ছেদঃ ৪২, নাবী (সাঃ) এর উক্তি যে আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করবে সে আমার উম্মত নয়, হাদিস# আ.হা.লা. ১৮১,১৮২,১৮৩, ই.ফা. ১৮২,১৮৩,১৮৪, ই.সে. ১৮৮,১৮৯,১৯০, অনুচ্ছেদঃ ৪৩, নাবী (সাঃ) এর উক্তি যে ব্যক্তি আমাদের ধোঁকা দেয় সে আমার উম্মত নয়, হাদিস # আ.হা.লা. ১৮৪, ই.ফা. ১৮৫, ই.সে. ১৯১।

ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত,

রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, … আর যে ব্যক্তি ক্বিসাসে (আল্লাহর নির্ধারিত শাস্তি কার্যকরে) বাঁধা দিবে তার উপর আল্লাহ্, মালাইকাহ্গণ (ফেরেশতাগণ) এবং সকল মানুষের লানত (অভিসম্পাত)। তার ফরজ বা নফল কোনো ইবাদাতই ক্ববুল হবে না।
(নাসাঈ, সহীহ্, অধ্যায়ঃ ক্বসামাহ্, অনুচ্ছেদঃ প্রস্তর অথবা কোড়ার আঘাতে নিহত ব্যক্তি, হাদিস# আরবী মিশর ৪৭৮৯, ৪৭৯০, ই.ফা. ৪৭৮৯, ৪৭৯০, আবু দাউদ, হাসান লি-গইরিহী, অধ্যায়ঃ ৩৪, রক্তমূল্য, অনুচ্ছেদঃ ১৭, ক্বাওমের যে ব্যক্তিকে ভুলবশতঃ হত্যা করা হয়, আরবী রিয়াদ ৪৫৩৯, ৪৫৪০, হু.মা. ৪৫৩৯, ৪৫৪০ (হাদিসটি নাসাঈর বর্ণনা)।

যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে

এদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ বলেন,

তোমরা আল্লাহ্’র পথে যুদ্ধ করো সেই লোকদের বিরুদ্ধে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর…।
(সূরা বাক্বারাহ্, ২/১৯০)

রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কে যারা কটাক্ষ করেছে তাদের সম্পর্কে

যারা বলে, আমরা তাদের ইসলাম বুঝাতে ব্যর্থ হওয়ায়
তারা কটাক্ষ করার সুযোগ পেয়েছে’

এ সম্পর্কিত বিধান,

এই ধরণের লোকেরা মূলতঃ মুনাফিক্ব। ঐ অন্ধ সাহাবী নাবী (সাঃ) কে কটাক্ষ করার কারণে যখন তাঁর (রা.) দাসীকে হত্যা করেছিল, তখন কি নাবী (সাঃ) বলেছিলেন, যে তুমি তোমার দাসীকে ইসলাম বুঝাতে সক্ষম হওনি। এই কারণেই সে, আমাকে (সাঃ) কটাক্ষ করেছিল ! এই ধরণের লোকেদের কথা শুনে বুঝা যায় যে, তারা সাহাবায়েকিরামগণের থেকেও বেশী ভদ্র ! সত্যিকার অর্থে এই লোকগুলো নাবী (সাঃ) সম্পর্কে কটাক্ষকারীদের বাঁচাতেই এই ধরণের বক্তব্য দিয়ে মুসলিম সমাজকে ধোঁকা দিতে চায়। মূলতঃ এই লোকগুলো ঐ কটাক্ষকারীদের দালাল। যারা মুসলিম সমাজকে ধোঁকা দেয়, তাদের সম্পর্কে আবু হুরাইরাহ্ (রা.) বর্ণনা করেন,
রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, … আর যে ব্যক্তি আমাদের ধোঁকা দিবে সেও আমার উম্মাত নয়।
(মুসলিম, অধ্যায়ঃ ১, কিতাবুল ঈমান, অনুচ্ছেদঃ ৪২, নাবী (সাঃ) এর উক্তি, যে ব্যক্তি আমাদের ধোঁকা দেয় সে আমার উম্মাত নয়, হাদিস # আ.হা.লা. ১৮৪, ই.ফা. ১৮৫, ই.সে. ১৯১)।

আর যারা মুসলিমদের সাথে ধোঁকাবাজী করে তাদের সাথে রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) সর্ম্পচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছেন। আবু হুরাইরাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত,

“… (নাবী (সাঃ) বলেছেন) জেনে রেখো, যে ব্যক্তি আমাদের (মুসলিমদের) সাথে ধোঁকাবাজী করে তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। (মুসলিম, অধ্যায়ঃ ১, কিতাবুল ঈমান, অনুচ্ছেদঃ ৪২, নাবী (সাঃ) এর উক্তি, যে ব্যক্তি আমাদের ধোঁকা দেয় সে আমার উম্মাত নয়, হাদিস# আ.হা.লা. ১৮৫, ই.ফা. ১৮৬, ই.সে. ১৯২)।

এই দুটি হাদিস থেকে বুঝা যায় যে, এই ধরণের ব্যক্তিরা মুসলিম নয়, বরং মুনাফিক্ব। এরা পরোক্ষভাবে রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর কটাক্ষকারীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। তাই বুঝে নিতে হবে যে, এ সকল ব্যক্তিরা নাবী (সাঃ) এর কটাক্ষকারীদের প্রতি পরোক্ষ সমর্থন দেয়ায়, তারাও রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কে কটাক্ষ করেছে বলে বুঝে নিতে হবে। তাই, এই ধরণের ব্যক্তিদের শাস্তিও মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে।

রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর সম্পর্কে কটাক্ষকারীদের

ব্যাপারে যে সকল মুসলিম নীরব ভূমিকা

পালন করে তাদের সম্পর্কিত বিধান

এ বিষয়টি দুইভাগে বিভক্ত,

ক. প্রতিবাদের সামর্থ থাকার পরও নীরব থাকা-
এই শ্রেণির লোকেরা মূলতঃ মুনাফিক্ব। রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর জন্য মূলতঃ এদের অন্তরে কোনো ভালবাসা নেই। যদি ভালবাসা থাকত তাহলে তারা কখনই রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কে কটাক্ষ করার ব্যাপারে নীরব থাকত না। যাঁদের মনে রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রতি ভালবাসা আছে তাঁরা অবশ্যই এ ধরণের ঘৃণ্য কাজের প্রতিবাদ করবে, যেমনিভাবে প্রতিবাদ করেছিল ঐ অন্ধ সাহাবী (রা.) তাঁর দাসীর সাথে।
(নাসাঈ, সহীহ্, অধ্যায়ঃ ৩৭, হত্যা অবৈধ হওয়া, অনুচ্ছেদঃ ১৬, রসূলুল্লাহ (সাঃ) কে মন্দ বলা, হাদিস # আরবী মিশর ৪০৭০, ই.ফা. ৪০৭১, আবু দাউদ, সহীহ্, অধ্যায়ঃ ৩৩, কিতাবুল হুদুদ, অনুচ্ছেদঃ ২, যে নাবী (সাঃ) কে গালী দেয় তার বিধান, হাদিস # আরবী রিয়াদ ৪৩৬১, ৪৩৬৩, হু.মা. ৪৩৬১, ৪৩৬৩, ই.ফা. ৪৩১০ (হাদিসটি নাসাঈর বর্ণনা)।

এ ধরণের লোকদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ বলেন,
মানুষের মাঝে এমন কিছু লোক আছে যারা বলে আমরা আল্লাহ্’র প্রতি এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান এনেছি, কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তারা ঈমানদার নয়। তারা আল্লাহ্ ও মুমিনদেরকে প্রতারিত করে। আসলে তারা নিজেদেরকে ছাড়া আর কাউকে প্রতারিত করেন না। কিন্তু এটা তারা উপলদ্ধি করতে পারে না।
(সূরা বাক্বরাহ্, ২/৮-৯)

খ. প্রতিবাদের সামর্থ না থাকার কারণে নীরব থাকা-

যারা সামর্থ না থাকার দরুণ এই ঘৃণ্যতম অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করতে পারছেন না। তাদের সম্পর্কে রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন,

তোমাদের কেউ অন্যায় কাজ হতে দেখলে তা যেন হাত দিয়ে পরিবর্তনের চেষ্টা করে আর যদি সেই সামর্থ না থাকে তাহলে সে যেন মুখের দ্বারা পরিবর্তনের চেষ্টা করে আর যদি এই সাধ্যও না থাকে তবে সে যেন মনে-মনে তা পরিবর্তনের উপায় খোঁজ করে, তবে এটা ঈমানের দূর্বলতার পরিচয়।
(মুসলিম, অধ্যায়ঃ ১, কিতাবুল ঈমান, অনুচ্ছেদঃ ২০, মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা ঈমানের অঙ্গ। ঈমান হ্রাস ও বৃদ্ধি পায়। ভাল কাজের আদেশ করা আর মন্দকাজের প্রতিরোধ করা ওয়াজিব, হাদিস # আ.হা.লা. ৮১, ই.ফা. ৮৩, ই.সে. ৮৫)।

This entry was posted in Uncategorized. Bookmark the permalink.

Leave a comment