ইসলাম মিটে যাবে ও কুরআন উঠিয়ে নেয়া হবেঃ
পূর্বে আলোচনা হয়েছে, ইয়াজুয ও মা’জুযের দল হালাক হয়ে যাওয়ার পর এবং কিয়ামতের বড় বড় আলামতগুলো প্রকাশ হওয়ার পর পৃথিবীর সর্বত্র ইসলামের মহান বিজয় ও বিস্তার ঘটবে। অতঃপর আবার ইসলাম দুর্বল হয়ে যাবে, অশ্লীলতা ও পাপাচারিতা বিস্তার লাভ করবে, ইসলামের শিক্ষা উঠে যাবে, কুরআন মুছে যাবে এবং দ্বীনি ইলমের চর্চা বন্ধ হয়ে যাবে। সকল ঈমানদার লোককে উঠিয়ে নেয়া হবে। শুধু নিকৃষ্ট লোকেরা অবশিষ্ট থাকবে। তাদের উপর কিয়ামত কায়েম হবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “কাপড়ের রং যেমন উঠে যায়, তেমনিভাবে ইসলাম উঠে যাবে। নামায, রোজা, হজ্জ ও যাকাতের কোন কিছুই অবশিষ্ট থাকবেনা। কুরআনের আয়াতগুলো মিটে যাবে। পৃথিবীর মানুষের মাঝে তখন ( لا إله إلا الله ) ব্যতীত ইসলামের অন্য কিছু অবশিষ্ট থাকবেনা। তারা বলবেঃ আমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে এ বাক্যটি বলতে শুনেছি তাই আমরা বলি।[102]
তাওহীদের কালেমা পাঠকারী এ শ্রেণীর লোকও চলে যাওয়ার পর কেবল নিকৃষ্ট লোকেরাই বেঁচে থাকবে। তাদের উপর কিয়ামত কায়েম হবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
لَا تَقُومُ السَّاعَةُ إِلَّا عَلَى شِرَارِ النَّاسِ
“নিকৃষ্ট মানুষের উপর কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে’’।[103]
কোমল ও ঠান্ডা বাতাসের মাধ্যমে মুমিনদের রূহ কবজঃ
আখেরী যামানায় একটি বাতাস এসে সমস্ত মুমিনদের জান কবজ করে নিবে। তারপর পৃথিবীতে আল্লাহ, আল্লাহ বলার মত তথা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করার মত কোন লোক থাকবেনা। নিকৃষ্ট লোকেরাই বেঁচে থাকবে। তাদের উপরেই কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে। আখেরী যামানায় সৎ লোকদের চলে যাওয়ার ধরণ সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ يَبْعَثُ رِيحًا مِنَ الْيَمَنِ أَلْيَنَ مِنَ الْحَرِيرِ فَلَا تَدَعُ أَحَدًا فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ إِيمَانٍ إِلَّا قَبَضَتْهُ
“আল্লাহ তা’আলা ইয়ামানের দিক থেকে রেশমের চেয়ে অধিক নরম একটি বাতাস প্রেরণ করবেন। সেদিন যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান থাকবে সেও এ বাতাসের কারণে মৃত্যু বরণ করবে’’।[104]
বাতাসটি রেশমের চেয়ে নরম ও কোমল হবে। ফিতনার সময় ঈমানের উপর অটল মুমিনদের সম্মানার্থেই আল্লাহ এ ধরণের বাতাস প্রেরণ করবেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ
ثُمَّ يُرْسِلُ اللَّهُ رِيحًا بَارِدَةً مِنْ قِبَلِ الشَّأْمِ فَلَا يَبْقَى عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ أَحَدٌ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ خَيْرٍ أَوْ إِيمَانٍ إِلَّا قَبَضَتْهُ حَتَّى لَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ دَخَلَ فِي كَبَدِ جَبَلٍ لَدَخَلَتْهُ عَلَيْهِ حَتَّى تَقْبِضَهُ قَالَ سَمِعْتُهَا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فَيَبْقَى شِرَارُ النَّاسِ فِي خِفَّةِ الطَّيْرِ وَأَحْلَامِ السِّبَاعِ لَا يَعْرِفُونَ مَعْرُوفًا وَلَا يُنْكِرُونَ مُنْكَرًا فَيَتَمَثَّلُ لَهُمُ الشَّيْطَانُ فَيَقُولُ أَلَا تَسْتَجِيبُونَ فَيَقُولُونَ فَمَا تَأْمُرُنَا فَيَأْمُرُهُمْ بِعِبَادَةِ الْأَوْثَانِ
“অতঃপর আল্লাহ তা’আলা শামদেশের দিক থেকে একটি ঠান্ডা বাতাস প্রেরণ করবেন। এ বাতাসের কারণে যার অন্তরে সামান্য পরিমাণ ঈমান আছে, সেও মৃত্যুবরণ করবে। সে যদি পাহাড়ের গুহায় ঢুকে পড়ে বাতাসটিও সেখানে প্রবেশ করে তার জান কবজ করবে। হাদীছের বর্ণনাকারী বলেনঃ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছি, অতঃপর কেবল দুষ্ট লোকেরা বর্তমান থাকবে। তাদের চরিত্র হবে হিংস্র পশু-পাখির ন্যায়। কোন ভাল কাজেই তারা লিপ্ত হবেনা এবং কোন খারাপ কাজ থেকেই তারা বিরত হবেনা। তাদের কাছে শয়তান আগমণ করে বলবেঃ তোমরা কি আমার কথা শুনবেনা? তারা বলবেঃ তুমি আমাদেরকে কিসের আদেশ দিচ্ছো? অতঃপর শয়তান তাদেরকে মূর্ত্যি পূজার আদেশ দিবে।[105]
শয়তানের আহবানে তারা প্রতিমা পূজাতে লিপ্ত হবে। কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্তে পৃথিবীবাসীর চারিত্রিক অধঃপতনের কথা বর্ণনা করে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
فَبَيْنَمَا هُمْ كَذَلِكَ إِذْ بَعَثَ اللَّهُ رِيحًا طَيِّبَةً فَتَأْخُذُهُمْ تَحْتَ آبَاطِهِمْ فَتَقْبِضُ رُوحَ كُلِّ مُؤْمِنٍ وَكُلِّ مُسْلِمٍ وَيَبْقَى شِرَارُ النَّاسِ يَتَهَارَجُونَ فِيهَا تَهَارُجَ الْحُمُرِ فَعَلَيْهِمْ تَقُومُ السَّاعَةُ
“ঈসা (আঃ) এর আগমণের পরে মুমিনদের অবস্থা খুব ভালভাবেই অতিবাহিত হতে থাকবে। এমন সময় আল্লাহ তা’আলা সুন্দর একটি বাতাস প্রেরণ করবেন। বাতাসটি প্রত্যেক মুমিন-মুসলিমের বগলের নীচে প্রবেশ করবে। এতে তাঁরা মৃত্যু বরণ করবে। শুধু দুশ্চরিত্রবান পাপীষ্ঠরাই বেঁচে থাকবে। গাধা যেমন গাধীর সাথে প্রকাশ্যে যৌনকর্মে লিপ্ত হয় তারাও অনুরূপভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে মানুষের চোখের সামনে রাস্তার মাঝখানে জেনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হবে। এই প্রকার নিকৃষ্ট লোকদের উপর কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে।[106]
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ
لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى لَا يُقَالَ فِي الْأَرْضِ اللَّهُ اللَّهُ
“পৃথিবীতে যতদিন “আল্লাহ আল্লাহ’’ বলা হবে ততদিন কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবেনা’’।[107]
কা’বা ঘর ভেঙ্গে ফেলা হবেঃ
কা’বা ঘর পৃথিবীর সকল মুসলমানদের কিবলা এবং তাদের সম্মানের প্রতীক। মুসলমানগণ যতদিন কা’বার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে ততদিন পর্যন্ত তারা কল্যাণের ভিতর থাকবে।
আখেরী যামানায় কিয়ামতের পূর্বমুহূর্তে যখন পৃথিবীতে “আল্লাহ আল্লাহমুমিন বলার মত কোন লোক থাকবেনা তখন কা’বাঘরের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করা হবে। তবে নামধারী মুসলমানদের দ্বারাই এ ঘটনা ঘটবে। যখন কা’বার প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করা হবে তখন মুসলমানদের ধ্বংস অনিবার্য। হাবাশা থেকে যুল-সুওয়াইকাতাঈন নামক একজন লোক এসে কা’বা ঘরকে ভেঙ্গে ফেলবে। কা’বার ভিতরের গুপ্তধন বের করে নিবে এবং তাকে গেলাফ শুন্য করে একটি একটি করে পাথর খুলে ভেঙ্গে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিবে। এরপর হজ্জ-ওমরা বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ তখন পৃথিবীতে কোন মুসলিম অবশিষ্ট থাকবেনা।[108]
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
يُخَرِّبُ الْكَعْبَةَ ذُو السُّوَيْقَتَيْنِ مِنَ الْحَبَشَةِ
“যুল-সুওয়াইকাতাঈন নামক এক হাবশী লোক কাবা ঘর ধ্বংস করবে।[109]
[১০২] – মুস্তাদরাকুল হাকেম, ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, সিলসিলায়ে সাহীহা, হাদীছ নং- ৮৭।
[১০৩] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।
[১০৪] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।
[১০৫] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।
[১০৬] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।
[১০৭] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।
[১০৮] – أشراط الساعة للوابل ( ص ২৩১)
[১০৯] – মুসনাদে আহমাদ। আল্লামা আহমাদ শাকের (রঃ) হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন।