শিরক হচ্ছে সকল পাপের চাইতে বড় পাপ। যা আল্লাহ তা’আলা যা কক্ষনো ক্ষমা করবেন না। যদি কোন ব্যাক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করে মারা যায় তাকে চিরস্থায়ী জাহান্নামে থাকতে হবে। শিরকের ভয়বহতা এত বেশি, শিরকের ভয়বহতা এত বেশি, শিরকের ভয়বহতা এত বেশি, যে শিরক মানুষের সব আমাল নস্ট করে দেয়, মানুষকে চিরস্থায়ী জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ ۚ وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَىٰ إِثْمًا عَظِيمًا
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সাথে শিরকের অপরাধ ক্ষমা করবেন না। আর ইহা ব্যতীত যাকে ইচ্ছা (তার অন্যান্য অপরাধ) ক্ষমা করে দেন।” (সূরা আন-নিসা ৪: ৪৮)
হাদিসের বর্ণিত আছে “যে ব্যাক্তি আল্লাহর সাথে কিছু শরিক না করে মারা যাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যাক্তি আল্লাহর সাথে কিছু শরিক করা অবস্থায় মারা যাবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” (মুসলিম-৯৩)
কুরআনে আল্লাহ বলেন,
وَإِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِهِ وَهُوَ يَعِظُهُ يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ ۖ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ
“যখন লোকমান তাঁর পুত্রকে উপদেশ দিয়ে বললেনঃ হে বৎস! আল্লাহর সঙ্গে শিরক করনা; কেননা শিরক সবচেয়ে বড় অন্যায় ” (সূরা লোকমান ৩১:১৩)।
মহিয়ান গরিয়ান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ ۖ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ
“নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই।” (সূরা মায়িদাহ -৫:৭২)
আল্লাহ তা’আলা তার প্রিয় নাবীকে সাবধান করে বলেন,
وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
“আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের পতি প্রত্যাদেশ হয়েছে, যদি আল্লাহর শরীক স্থির করেন, তবে আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের একজন হবেন। ”(সূরা যুমার-৩৯:৬৫)
অতএব এ আয়াৎ থেকে আমরা জানতে পারি নাবী (সা) যদি শিরক করতো তাহলে তার সমস্ত আমল ধ্বংস হয়ে যেত অতএব আমরা উম্মতরা কোথায় আছি। সুতরাং শিরক থেকে সাবধান, শিরক থেকে সাবধান, শিরক থেকে সাবধান। হে আল্লাহ, হে বিশ্বজগতের পালনকর্তা তোমার কাছে আমরা যাবতীয শিরক থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমীন। ছুম্মা আমীন।
একনজরে আমাদের সমাজে প্রচলিত শিরক
নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল…
1. আহবানের শিরকঃ আহ্বানের শিরক বলতে মানুষের ক্ষমতার বাইরে এমন কোন পার্থিব লাভের আশায় অথবা কোন পার্থিব ক্ষতি হতে রক্ষা পাবার উদ্দেশে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে আহবান করা বুঝায়। (সূরা জিন ৭২:১৮, রাদ-১৩:১৪, মারিয়াম-১৯:৪৮)
2. ফরিয়াদের শিরকঃ ফরিয়াদের শিরক বলতে নিতান্ত অসহায় অবস্থায় আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সাহায্যের জন্য ডাকাকে বুঝায়। রোগ নিরাময়ে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ডাকা। (সূরা আনফাল-৮:৯, আনকাবুত-২৯:৬৫)
3. আশ্রয়ের শিরক- কোন অনিষ্টকর বস্তু বা ব্যক্তি হতে বাঁচার জন্য আলাহ ব্যতিত অন্য কারো কাছে আশ্রয় নেয়া বা সরনাপন্ন হওয়া। (সূরা ফুসসিলাত/ হা মিম আসসাজদাহ-৪১:৩৬, সূরা মুমিনুন-২৩:৯৭-৯৮, সূরা ফালাক ১১৩:-১-৫, সূরা নাস ১১৪:১-৬)
4. আশা বা বাসনার শিরক- মানুষের অসাধ্য কোন বস্তু আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে কামনা করা। যেমন, কোন পিরের কাছে সন্তান কামনা করা। (সূরা আশ-শুআরা-৪২:৪৯,৫১)
5. নামাজের শিরক- রুকু, সিজদাহ, সওয়াবের আশায় কোন ব্যক্তি বা বস্তুর সামনে বিনম্রভাবে দাঁড়ানো বা নামাজের শিরক বলতে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাতগুলো ব্যয় করাকে বুঝান হয়। (সূরা হাজ্জ-২২:৭৭, আনআম-৬:১৬২-১৬৩)
6. তাওয়াফের শিরক- কাবা ঘর ব্যতিত অন্য কোন বস্তুর তাওয়াফ করা।(হাজ্জ-২২:২৯, বাকারাহ-২: ১২৫)
7. তাওবার শিরক- আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে তাওবা করা। (সূরা নুর-২৪:৩১, আল ইমরান-৩:১৩৫)
8. জবাইয়ের শিরক- আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নৈকট্য লাভের জন্য পশু জবাই করা। চাই তা আল্লাহর নামেই করা হোক বা অন্য কারো নামে বা নাবী বা জিনের নামে। (সূরা আনআম- ৬:১২১, ১৬২-১৬৩)
9. মানতের শিরক- আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর জন্য মানত করা। (সূরা-হাজ্জ-২২:২৯, বাকারাহ-২:২৭০, আনআম-৬:১৩৬)
10. আনুগত্যের শিরক- বিনা ভাবনায় শরিয়তের গ্রহণযোগ্য কোন প্রমান ছাড়াই হালাল হারাম জায়েজ নাজায়েজের ব্যপারে আলেম বুজুর্গ বা উপরস্থ কারো সিদ্ধান্ত অন্ধভাবে সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নেয়া।(তাওবা-৯:৩১, আনআম-৬:১২১,আরাফ-৭:৩,)
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্ধভাবে চার মাঝহাবের চার জন মহামতি ইমামের অন্ধ অনুসরণ করাও শিরক। উপরন্তু এই চার জন মহান ব্যক্তি কখনই নিজেকে অন্ধভাবে অনুসরন করতে বলেনি। যদি কোন ব্যক্তি মনে করে বর্তমান যুগে ইসলামিক শাসনব্যবস্থা অচল এবং গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র,পীরতন্ত্র,ধরমনিরপেক্ষ মতবাদ ইত্যাদিই হল আধুনিক পদ্ধতি তাহলে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে। খ্রিস্টানরা তাদের আলিমদের উপাসনা করত না তবে তারা হালাল হারামের ব্যপারে বিনা প্রমানে তাদের আলিমদের সিদ্ধান্ত মেনে নিত। আর এটিই হচ্ছে শিরক। (তিরমিজি-অধ্যায় ৪৭ হা: নং ৩০৯৫)
ইনশাআল্লাহ পরবর্তীতে আরও আসছে……..